ইখলাস ও লিল্লাহিয়াত

আমল যেমন ইখলাস ছাড়া নিষ্ফল ও অগ্রহণীয়, তেমনি ইখলাসবিহীন দাওয়াতও প্রভাবহীন, অকার্যকর।
স্বয়ং দা‘ঈর অন্তর ইখলাসশূন্য হলে তার দাওয়াত দ্বারা শ্রোতার জীবনে পরিবর্তন সাধিত হয় না।
পক্ষান্তরে যে দা‘ঈ প্রতি কদমে লিল্লাহিয়াতের অনুশীলন করেন, প্রতিটি আমলে ইখলাসের মুহাসাবা করেন তাঁর কথার প্রভাবে অহর্নিশ মানুষের ঈমান-আমলে উন্নতি ও পরিশুদ্ধি সাধিত হওয়া বিস্ময়কর নয়। তাঁর লিখনীতে সমাজের পরিবেশ ও সংস্কৃতি নূরান্বিত হওয়াই স্বাভাবিক।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. দেশের বিভিন্ন স্থানে মাহফিলে অংশগ্রহণের জন্য সফর করে থাকেন। এসব মাহফিলে বয়ান করার জন্য তাঁকে দাওয়াত দেয়ার প্রধানতম শর্তই হলো, বয়ানের জন্য তাঁকে কোনো হাদিয়া দেয়া যাবে না।
কোনো প্রকার হাদিয়া প্রদান না করার উক্ত শর্ত আরোপ করা প্রসঙ্গে হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. বলেন, চুক্তিবিহীন হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয হলেও তা চুক্তিবদ্ধ হাদিয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
তিনি এ ক্ষেত্রে স্বীয় শায়খ হারদুঈর হযরত রহ. এর কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলতেন, তোমরা বয়ান এবং ওয়াজ মাহফিল থেকে টাকা-পয়সা নিও না।
এতে এই নবীওয়ালা কাজে কথার ‘আসর’ বা প্রভাব থাকে না। শাইখের এই কথার কারণে তিনি মাহফিলের সফরে গাড়ির ভাড়া ছাড়া কোনো টাকা-পয়সা নেন না।
বরং কখনো এমনও দেখা গেছে, বিভিন্ন মাদরাসার তহবিলে নিজের পকেট থেকে টাকা-পয়সা দান করে এসেছেন।
কিছুদিন আগে হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. জুরাইন এলাকায় একটা মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।
অনেক জোরাজুরি করা সত্ত্বেও উক্ত মাহফিলের আয়োজকগণ তাঁকে হাদিয়া দিতে পারেননি।
শুধু তাঁর অনুপস্থিতিতে ড্রাইভারকে যাতায়াত খরচ দিতে পেরেছিলেন, যা সাধারণ ভাড়ার চেয়ে কিছুটা বেশি ছিলো। হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. গাড়িতে ওঠার পর যখন বিষয়টা জানতে পারলেন, তখন ড্রাইভারকে বলে অতিরিক্ত পরিমাণটাও ফেরত দিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে হযরতের শাগরেদ ও সফরসঙ্গী মাওলানা জালীস মাহমুদ বলেন, এই নির্মোহ মানুষটির নজির পাওয়া আজ দুষ্কর, যিনি বয়ানের কোনো হাদিয়া নেয়া তো দূরের কথা, এমনকি গাড়িভাড়ার অজুহাতেও অতিরিক্ত পয়সা নেন না; যদিও তা ড্রাইভারকেই দেয়া হয়।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. যেমনিভাবে বয়ানের কোনো হাদিয়া গ্রহণ করেন না তেমনিভাবে তাঁর লিখিত বইগুলোর লভ্যাংশও নিজে ভোগ করেন না।
এগুলোর অধিকাংশেরই স্বত্ব বা রয়্যালিটি নিজের নামে রাখলেও তার লভ্যাংশের মালিকানা জামি‘আ রাহমানিয়ার নামে দিয়ে রেখেছেন।
হযরতের ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্য মতে, বর্তমানে তিনি শুধু এই লভ্যাংশের সংরক্ষণ করছেন। রাহমানিয়ার প্রয়োজন উপলব্ধি করা মাত্রই তিনি এটা রাহমানিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন