বয়ানের মিম্বরে প্রভাবশালী বক্তা

দ্বীন পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর এবং ফলপ্রসূ পদ্ধতি হলো, ওয়াজ মাহফিল ও বয়ানের মাধ্যমে মানুষের কানে দীনের ফরযে আইন পরিমাণ ইলম পৌঁছানো।
এতে সচেতন মুসলিম মাত্রই সব ধরনের কুসংস্কার ও বাতিল মতাদর্শের রাহমুক্ত হতে পারে এবং সুন্নতে নববীর অনুসরণে নিষ্কলুষ দ্বীনের ধারক হতে পারে।
অন্তত দীনহীন হৃদয়ে মুখলিস দা’ঈর সরল দিকনির্দেশনায় ঈমানের নূর জ্বলে ওঠে।
এমনকি কখনো বক্তার অন্তর্দৃষ্টি বা প্রজ্ঞার প্রভাবে বক্র হৃদয়ের বদ্ধদুয়ারও নিমেষেই খুলে যায়।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. দরস-তাদরীসের অবসরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে দ্বীনী প্রোগ্রাম এবং মাহফিলে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
এসব এলাকায় সফর হয় সাধারণত দরস বন্ধ থাকাকালীন দু’-তিন মাস পর পর।
তবে দরস চলাকালীনও কখনো শুক্রবারগুলোতে প্রোগ্রামে গিয়ে থাকেন।
এছাড়া নিয়মিত মোহাম্মদপুরস্থ জামি‘আতুল আবরার রাহমানিয়ায় দাওয়াতুল হকের ব্যানারে অনুষ্ঠেয় প্রতি মাসের আইম্মায়ে মাসাজিদ সম্মেলনে প্রধান আলোচক হিসেবে বয়ান করেন।
তেমনি খিলগাঁও বাজার মসজিদে অনুষ্ঠেয় দাওয়াতুল হকের মাসিক জলসায়ও একই ভূমিকায় আলোচনা পেশ করেন।
এছাড়া দাওয়াতুল হকের পাক্ষিক মাশওয়ারায়ও তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন।
তার এ সকল আলোচনায় আশপাশের এলাকার দ্বীনদার জনসাধারণ বিপুল আগ্রহে শরীক হয়ে থাকেন।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর বয়ানে সুরের বাহুল্য কিংবা কিচ্ছা-কাহিনীর রসালাপ থাকে না।
হৃদয় তোলপাড় করা সুরের ঝঙ্কারে শে’র-আশ‘আরের আবৃত্তিও তিনি করেন না।
তবে তাঁর বয়ানে থাকে দ্বীন ও ঈমান সংশোধনের প্রেরণা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের অনুশীলন, বিভ্রান্তি ও কুসংস্কারের অপনোদন এবং বিভিন্ন আমলী সুন্নতের বাস্তব প্রশিক্ষণ।
আকায়েদ-ইবাদাত সহ দ্বীনের মূল পাঁচটি বিষয়ে বিন্যস্ত আলোচনায় তিনি উপস্থাপন করেন দীনের সারবত্তা।
সে আলোচনা একাধারে বাতিলের মুন্ডুপাত করে, বিদ’আতের শেকড় উপড়ে মূল প্রসঙ্গে এগিয়ে যায়।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর বয়ানে যদিও সরস উপস্থাপনা থাকে না, তবু তাঁকে কেন্দ্র করে যেসব নিয়মিত প্রোগ্রাম হয় এগুলোতে বিপুল পরিমাণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম ঘটে।
তাদের কেউ চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, কেউ প্রকৌশলী, আবার কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এসব প্রোগ্রামে নিয়মিত অংশগ্রহণকারীদের উত্তরোত্তর আত্মিক ও মানসিক প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়।
এমনও দেখা গেছে, দীনের প্রতি অনুরক্ত বন্ধুবান্ধবদের মধ্য থেকে যারা তাঁর বয়ানে নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছেন তাদের মননশীলতার সাথে অন্যান্য বন্ধুদের বিস্তর ফারাক পরিলক্ষিত হয়েছে।
ওয়াকিফহাল মহলের মতে, বক্তার আমল ও তাকওয়াই এই পরিবর্তনের মূল নিয়ামক।
হযরতের বয়ানে নিয়মিত অংশগ্রহণকারীরা বলেন, তাঁর কথাগুলো অন্তরের গভীরে গিয়ে বিদ্ধ হয়।
তাঁর কথায় যেন অন্যরকম প্রাণ থাকে।
তিনি যে কথাই বলেন তার উপরই আমল এসে যায়।
হযরতের অনুরাগী এই মহলের ধারণা, হযরত মুফতী সাহেব দা. বা. এর দু’টি বৈশিষ্ট্য এক্ষেত্রে তাঁকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করেছে। একটি হলো, সুন্নতের ওপরে তাঁর মযবুতী, আর অপরটি হলো গুনাহ বর্জন।
যা অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে হয়তো পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে না।
হযরত মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা. বা. এর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি পূর্বনির্ধারিত কোনো বিষয়ে বয়ান করেন না।
বরং বয়ানের পূর্বমুহূর্তে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যে বিষয়টির ইলহাম হয় সে বিষয়ে বয়ান করেন- চাই তা সময়ের প্রেক্ষাপটে হোক কিংবা কোনো প্রেক্ষাপট ছাড়া সাময়িক প্রয়োজনের তাগিদে হোক অথবা সুনির্দিষ্ট কোনো শ্রোতার মানসিক অবস্থার উপলক্ষেই হোক।
মূলত এ ধরনের ইলহাম উপস্থিতির মানসিকতাকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে।
ফলে কথাগুলো সকলের মনের গভীরে রেখাপাত করে।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর ইলহাম-সম্পর্কীয় এই গুণটির বহিঃপ্রকাশের ঘটনা বহুবার ঘটেছে।
হযরতের গুণমুগ্ধ একজন নিয়মিত সফরসঙ্গীর ভাষ্য হলো, হযরতের প্রোগ্রামে কখনো কখনো বিকৃত চিন্তাধারা লালনকারী, ভ্রান্ত মতাদর্শের অনুসারী কিংবা বাতিল আকীদায় বিশ্বাসী মানুষের আগমন ঘটে।
এরা কখনো পূর্ব-অবগতি দিয়ে আসে না। কখনো এমনও হয়, হযরতের আলোচনা পূর্ব থেকে কোনো একটি বিষয়ে চলতে থাকে।
এমতাবস্থায় আকস্মিকভাবে পূর্বাপর আলোচনার সাথে একেবারেই সঙ্গতিহীন কোনো প্রসঙ্গে কথা শুরু করে দেন। অবস্থাদৃষ্টে ব্যাপারটি অন্যরকম মনে হলেও বয়ানের পরে দেখা যায়, সামঞ্জস্যহীন সেই কথাগুলোর মাধ্যমে ভিন্ন মতাদর্শী আগন্তুকের হিদায়াত হয়ে গেছে।
এ থেকে বোঝা যায়, তিনি কাশফ ও ইলহামের অধিকারী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন