দরসের মসনদে স্বাধীন মুজতাহিদ

হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. লালবাগ মাদরাসায় থাকাকালীন উস্তাদ হিসেবে জুনিয়র ছিলেন।
এ সময়ে তাঁর কাছে যে কোনো শ্রেণীর ছাত্র যে কোনো কিতাবের জটিলতার মাসআলার সহজ সমাধান পেয়ে যেতো।
ছাত্ররা তাঁর কাছে দরসে নিযামীর অন্তর্ভুক্ত যে সব কিতাব হল করতে আসতো তার অধিকাংশই তার পড়ানোর দায়িত্ব ছিল না।
এ কিতাবগুলো কোনো মুরুব্বী উস্তাদ পড়াতেন।
ছাত্ররা দরসে কোনো মাসআলা না বুঝলে ভয়ের কারণে মূল উস্তাদের কাছে না গিয়ে তাঁর কাছে এসে ভীড় করতো।
তিনি ছাত্রদের প্রশ্নগুলোর এমন সহজ ও সুন্দর জবাব দিতেন যে, তাদের কাছে সেই মাসআলা আয়নার মতো স্বচ্ছ হয়ে যেতো।
তাঁর সমাধানগুলো শুনলে মনে হতো, যেন এইমাত্র কিতাব থেকে মুতালা‘আ করে তিনি সমাধানটি বের করেছেন।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর কিতাব বোঝানোর এই গুণটির কথা তাঁর সব যুগের ছাত্ররাই স্বীকার করেন।
তাঁর বর্তমান ছাত্রদের ভাষ্যমতে, তাঁর সবকে বসে কোনো ছাত্রই বঞ্চিত হয় না।
তাঁর সবক উপস্থাপনের পদ্ধতিই এমন অভিনব ও উন্নততর যে, দরস দু’ তিন ঘন্টা ব্যাপী দীর্ঘ হলেও কোনো ছাত্র মনোসংযোগ-বিচ্ছিন্ন হয় না।
এতো দীর্ঘ সময়ের দরসেও ছাত্রদের কোনো ক্লান্তি, কোনো অবসাদ আচ্ছন্ন করে না। উপরন্তু দরস থেকে ওঠার পর কখনো মনে হয়, অতৃপ্তি রয়েই গেল!
সর্বোপরি জামা‘আতের মেধাবী এবং দুর্বল উভয়শ্রেণীর ছাত্ররাই দরসের প্রতিটি কথা সমানভাবে আয়ত্ব এবং আত্মস্থ করতে সমর্থ হয়; যা এ যুগের উস্তাদদের মধ্যে একেবারেই দুর্লভ।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর এমন ছাত্রবান্ধব গুণের মূল রহস্য হলো,
তিনি তালিবে ইলমদেরকে উম্মতের আমানত মনে করেন।
এ কারণে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হলো, উস্তাদের মধ্যে ইজতেহাদী মনোভাব থাকা অত্যন্ত জরুরী।
উস্তাদ সব সময় তালিবে ইলমদেরকে সহজতম পন্থায় কিতাব বোঝানোর নিত্যনতুন পন্থা উদ্ভাবন করতে থাকবেন।
যাতে কোনো সবক কোনো ছাত্রের জন্য দুরূহ না হয়ে যায়।
এই ইজতেহাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর উপস্থাপনা ছাত্রদের জন্য অত্যধিক উপযোগী হয়।
দরসের শুরুতেই তিনি সেদিনের সবকের সারাংশ বলে নেন।
এরপর পুরো সবকের কথাগুলো বিশদভাবে এতোটাই ধীরে ধীরে বলেন যে, কেউ কথাগুলো লিখতে চাইলে হুবহু লিখে নিতে পারে।
তাছাড়া তিনি কথা বলার সময় অনেকটা ধমকের মতো জোরালো স্বরে কথা বলেন।
এ কারণে কেউ না লিখলেও কথাগুলো তার অবচেতন মনের গভীরে গেঁথে যায়।
দরসের কথাগুলো এতটাই বিশ্লেষণধর্মী ও বাস্তবসম্মত হয় যে, প্রতিটি মাসআলার সমস্ত দিক এবং প্রতিটি আপত্তির সকল উত্তরই আলোচনায় চলে আসে।
যখন সারাংশের কথাগুলোই পুরো দরসে একে একে আসতে থাকে তখন কোনো ছাত্রের জন্য অমনোযোগিতার সুযোগ থাকে না। ছাত্রদের ঘুম বা তন্দ্রাভাব আসা তো দূরের কথা, বরং পুরো ক্লাসের সকল ছাত্রই যেন তাঁর দরসে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে কথাগুলো আত্মস্থ করতে থাকে।
এরকম সুবিন্যস্ত ও ধীর উপস্থাপনার কারণে দরস থেকে ওঠার সময় একজন দুর্বল ছাত্রও সবকের আদ্যোপান্ত গুছিয়ে বলে দিতে পারে।
মুফতী সাহেব দা.বা. লালবাগ জামি‘আয় থাকাকালীন ১৯৮৬ সাল থেকে কাশিয়ানী হুজুর রহ. এর পক্ষে বুখারী ও মিশকাত শরীফের দরস দিতেন।
সেই থেকে আজ অবধি প্রায় ৩০ বছর যাবত তিনি বোখারী ও মিশকাত শরীফ পড়ানোর মহান খিদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমানে তিনি নিয়মিত শুধু জামি‘আ রাহমানিয়ায় বুখারী শরীফের প্রথম খন্ড এবং মিশকাত শরীফের প্রথম অংশের দরস দিলেও অবসরে কখনো কখনো ঢাকা বা ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন মাদরাসায়ও বুখারী শরীফের দরস প্রদান করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন