ফাতাওয়ার অঙ্গনে বিদগ্ধ ফকীহ

কথায়-কাজে মিল থাকা এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়ার গুণ এমন, যা সহজসাধ্য মনে হলেও অধিকাংশ মানুষের জন্য এর বাস্তবায়ন কল্পনাই বটে।
কিন্তু যে ব্যক্তি নিজেকে ন্যায়ের প্রতিভূ হিসেবে বিশ্বাস করেন, শরী‘আতের জীবন্ত নমুনা রূপে নিজেকে প্রকাশ করেন তার জন্য এটা সামান্য ব্যাপার।
তার কাছে নিজের জীবনের চেয়ে দ্বীনের মূল্য বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।
শর‘ঈ বিধান লঙ্ঘিত হবার ভয়ে তিনি যদি কোনো আপনজনকে রুষ্ট করেন তাও অস্বাভাবিক নয়।
২০০৬ সালে সারাদেশের বহু মানুষ স্বচক্ষে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা সত্ত্বেও সরকারীভাবে পরবর্তী দিন ঈদ না হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
এসময় আপোসহীনতার মূর্তপ্রতীক শাইখুল হাদীস হযরতুল আল্লাম মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা. বা. সকল কায়েমী স্বার্থের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পরবর্তী দিন ঈদ হওয়ার সাহসী ফাতাওয়া ঘোষণা করেন।
সেদিন তিনি রাহমানিয়া মিলনায়তনে ঈদের নামায আদায় করেন।
এই ফাতাওয়ার কারণে তিনি প্রাণনাশসহ বিভিন্ন হুমকি-ধমকির সম্মুখীন হন।
এমনকি একারণে তাঁকে খিলগাঁও শাহজাহানপুরস্থ আমতলা জামে মসজিদের খতীবের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
তবু তিনি অন্যায়কে বিন্দুমাত্র বরদাশত করেননি।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির কাছে তিনি নিজের অবিচল অবস্থান ব্যক্ত করে বলেছিলেন, আমি এখানে নামায পড়াবো কি পড়াবো না- সেটা আপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন।
কিন্তু আমি যেখানেই থাকি না কেন, হক কথা বলেই যাবো।
শরী‘আতের গন্ডির বাইরে আমি একটি কদমও উঠাবো না।
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার ওপর যিম্মাদারী।
গত ২৮ শে রমাযান হযরতের বড় সাহেবজাদা মাওলানা আবু সাইদ রহ. পাকিস্তানে শিয়াদের হামলায় শহীদ হয়।
হযরত ইচ্ছা করলে খুব সহজেই পুত্রের লাশ দেশে আনাতে পারতেন।
কিন্তু শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে লাশ একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর করা এবং জানাযা বিলম্বিত করা জায়েয নেই বিধায় তিনি তার পাকিস্তান প্রবাসী ভাইকে ফোনে বলে দিলেন ‘যত দ্রুত সম্ভব জানাযা ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করো।
এখানেও তিনি আদরের সন্তানকে শেষ বারের মত দেখা এবং নিজে ছেলের জানাযার পড়ানোর আবেগের উপর শরী‘আতের হুকুমকেই প্রাধান্য দিলেন।
মোটকথা, হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর কাছে দ্বীন এবং শরী‘আতের গুরুত্ব আপনজন এমনকি নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি।
এ কারণে তিনি দ্বীনের বিধান লঙ্ঘিত হওয়ার কারণে প্রাণপ্রিয় সন্তানের জানাযাও ত্যাগ করেছেন।
কাজেই দ্বীনের প্রশ্নে আপোসহীন এই ব্যক্তিত্ব ফাতাওয়া প্রদান এবং মাসআলা-মাসাইলের ক্ষেত্রে কতোটা দূরদর্শিতা এবং সতর্কতা অবলম্বন করবেন তা সহজেই অনুমেয়।
হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর ফাতাওয়াগুলো যারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাদের মতে, বাংলাভাষায় যারা ফাতাওয়া প্রদান করেন তাঁদের মধ্যে হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর অবস্থান অনন্য উচ্চতায়।
খুঁটিনাটি বিষয়গুলোতে তাঁর বিশ্লেষণ একেবারে চুলচেরা।
এমনকি তাঁর মাসআলা-মাসাইল বিষয়ক মজলিসের সাধারণ শ্রোতাগণও এমন সূক্ষ্মতর মাসাইল সম্পর্কে অবগত, যেগুলো বছরের পর বছর গবেষণা করার পরও বহু ফাতাওয়া-নবিসের আওতার বাইরে থেকে যায়।
মূলত ফাতাওয়া প্রদানে অধিক সতর্কতা, স্পষ্টবাদিতা ও দূরদর্শিতার কারণে অন্যান্য বাংলাভাষী মুফতীদের তুলনায় তাঁর ফাতাওয়াগুলো অধিক বিশুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।
জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়ার ফাতাওয়া বিভাগের মাধ্যমে হযরত মুফতী সাহেব দা.বা. এর লিখিত ফাতাওয়া প্রকাশিত হয়।
এছাড়া ফোনেও তিনি মাসআলা বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেন। যে কোনো বয়ানের পরে তাঁর কাছে প্রশ্ন করেও শর‘ঈ সমস্যার সমাধান জেনে নেয়া যায়।
লিখিত ফাতাওয়া চাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি আছে।
তবে মৌখিক মাসআলা জানার ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ বাধ্যবাধকতা নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন